ঢাকায় বাড়িভাড়া নির্ধারণে আসছে ডিএনসিসির নতুন উদ্যোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক
নভেম্বর ২৯, ২০২৫, ০১:৪৫
জীবিকার প্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন জেলা–উপজেলা থেকে প্রতিদিনই মানুষ ছুটে আসে রাজধানী ঢাকায়। চাকরি, ব্যবসা বা শিক্ষা সব মিলিয়ে এই শহরটি হয়ে উঠেছে লাখো মানুষের ভরসাস্থল। কিন্তু বসবাসের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটাই হলো বাড়িভাড়া।
বর্তমানে ঢাকার প্রায় তিন-চতুর্থাংশ মানুষ ভাড়া বাসায় থাকেন, আর ভাড়া বাড়ানো ও সুবিধাবঞ্চনার অভিযোগ বহুদিনের। ভাড়াটিয়া ও বাড়িওয়ালার সম্পর্কেও তৈরি হয় নানা দ্বন্দ্ব। এ সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে বহু আগে প্রণীত হয়েছিল ‘বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১’, কিন্তু বাস্তবে সেই আইন খুব একটা কার্যকর হয়নি বলে দীর্ঘদিন অভিযোগ রয়েছে।
বাড়িভাড়া নির্ধারণ, হঠাৎ বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি, অতিরিক্ত অগ্রিম দাবি, কিংবা ন্যূনতম সুবিধাও ঠিকভাবে না দেওয়া এসব কারণে ভাড়াটিয়া জনগোষ্ঠীর চাপ দিন দিন বাড়ছে। এই বাস্তবতায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)
বৃহস্পতিবার দুপুরে এক বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
বাড়িওয়ালা, ভাড়াটিয়া, নীতিনির্ধারক এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মতামত দেন কীভাবে একটি কার্যকর ও আধুনিক ভাড়া নীতিমালা তৈরি করা যায়।
প্রস্তাবনাগুলোতে উঠে এলো ভাড়ার স্বচ্ছতার দাবি সভায় আলোচকরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা দেন। যার মধ্যে ছিল, বাড়ির সার্বিক সুবিধা যেমন পানি, বিদ্যুৎ, নিরাপত্তা, গ্যাস, লিফট, রক্ষণাবেক্ষণ এসব বিবেচনায় ভাড়া নির্ধারণে একটি মানদণ্ড তৈরি করা প্রতিটি বাড়ির ১০ থেকে ২০ শতাংশ অংশ মেস বা গ্রুপভাড়ার জন্য বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব কর বা ট্যাক্সের বাস্তব কাঠামো বিবেচনায় এবং মুদ্রাস্ফীতির হার অনুসারে ভাড়া পুনঃনির্ধারণের সুপারিশ কোন এলাকায় কতটুকু ভাড়া যুক্তিযুক্ত হতে পারে এ নিয়ে একটি স্পষ্ট গাইডলাইন প্রণয়ন অংশগ্রহণকারীদের মতে, এসব প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে ভাড়াটিয়া ও বাড়িওয়ালার দ্বন্দ্ব কমবে এবং ভাড়া নির্ধারণে একই নিয়ম সারা শহরে প্রয়োগ করা সম্ভব হবে।
ডিএনসিসি প্রশাসকের নতুন নির্দেশনা ডিএনসিসির প্রশাসক এজাজ আহমেদ সভায় বলেন, ভাড়াটিয়াদের অধিকার রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি। তাই প্রত্যেক ওয়ার্ডে ভাড়াটিয়া সমিতি গঠন করা জরুরি। এতে এলাকার ভাড়াটিয়ারা সংগঠিত হয়ে যৌক্তিক দাবি জানাতে পারবে এবং কোনো বিরোধ হলে স্থানীয় পর্যায়েই সমাধানের সুযোগ তৈরি হবে।
তিনি আরও বলেন, শুধু ভাড়া বাড়ানোর নীতিমালা নয়, বরং অঞ্চল অনুযায়ী সর্বোচ্চ ভাড়ার সীমা নির্ধারণের মতো গাইডলাইনও তৈরি করা হবে। এতে একই ধরনের বাসা এক এলাকায় অত্যধিক ভাড়ায় দেওয়ার প্রবণতা কমবে। ডিসেম্বরের মধ্যভাগে এসব প্রস্তাবনা সমন্বয় করে একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রকাশ করার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।
ঢাকায় ভাড়ার অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি এক চিরচেনা সমস্যা রাজধানীর বাসিন্দাদের মতে, গত কয়েক দশকে ভাড়া এত দ্রুত বেড়েছে যে মধ্যবিত্ত পরিবারের উপর চাপ কয়েকগুণ।
নানা জরিপে দেখা গেছে, অনেক এলাকায় ১০ বছরে ভাড়া চার থেকে পাঁচ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ, সেবা বা নিরাপত্তা সবসময় সে তুলনায় বাড়েনি।
অন্যদিকে বাড়িওয়ালারা দাবি করেন, তারা বাড়ির কর, ইউটিলিটি বিল, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় বাড়ার কারণে বাধ্য হয়ে ভাড়া বাড়ান। ফলে দুই পক্ষের মাঝে অমনোযোগী নীতিমালার অভাবেই দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। কী পরিবর্তন আনতে পারে নতুন নীতিমালা?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিএনসিসির উদ্যোগ সফল হলে ভাড়া নির্ধারণে স্বচ্ছতার সৃষ্টি হবে বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়ার বিরোধ কমবে ভাড়াটিয়ারা অধিকারবোধ নিয়ে বাস করতে পারবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় কমবে প্রতিটি এলাকায় ভাড়ার ভারসাম্য তৈরি হবে।
তবে তারা মনে করেন, শুধুমাত্র নীতিমালা তৈরি করলেই হবে না; কার্যকর বাস্তবায়ন ও তদারকি প্রক্রিয়া গড়ে তোলাই হবে মূল চ্যালেঞ্জ।
আমার সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন